না.গঞ্জে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কোটি টাকার পরী পালং খাট

শেয়ার করুণ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে পরী পালং খাট। রাজকীয় কারুকাজ ও পরীর ডিজাইনে এটি তৈরি করা হয়েছে। মেশিনের ব্যবহার ছাড়াই সর্বোচ্চ নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলেছেন কারিগর। এসব মুগ্ধ করেছে নৈপুণ্য ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের। খাটটির দাম এক কোটি টাকা চেয়েছেন ডিজাইনার ও মালিক মো. নুরুন্নবী। যিনি খাটটি কিনবেন তাকে একটি মোটরসাইকেল ও সোনার গয়না উপহার দেওয়া হবে।

নুরুন্নবী খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি ফার্নিচার ব্যবসায়ী নন, পল্লী চিকিৎসক। শখের বশে খাটটি কারিগর দিয়ে বানিয়েছেন।

১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ১০টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের নানা পণ্যে সাজিয়েছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন। এছাড়া দেশি নানা পণ্যের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে একটি পরী পালং খাটের স্টল।

পরী পালং খাটের স্টলে দেখা যায়, স্টলের সামনে দড়ি দিয়ে বেঁধে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। দড়ির কাছাকাছি থেকে খাটটি দেখছেন দর্শনার্থীরা। খাটের চার কোণে দাঁড়িয়ে আছে পরীর আদলে চারটি মূর্তি। বিভিন্ন অংশে আরও ১২টি পরী রয়েছে। আধুনিক, নানন্দিক কারুকাজ এবং শৈল্পিক আবহে এটি তৈরি করা হয়েছে। যা দেখতে স্টলের সামনে ভিড় করছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ খাটের সামনে সেলফি তুলছেন। দু’একজন দাম জানতে চান। কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। তবে মালিকপক্ষ ও বিক্রেতার নিষেধ থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না কারও। কেউ যাতে খাটের কাছে যেতে না পারেন, স্পর্শ করতে না পারেন, সেজন্য সার্বক্ষণিক দুজন কর্মী স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

এর মধ্যে একজন পরী পালং খাটের ডিজাইনারের ছোট ভাই অন্তর মাহমুদ। তিনি দর্শনার্থীদের বারবার বলছেন, ‘খাটটির দাম এক কোটি টাকা। এটি স্পর্শ করা যাবে না। দূর থেকে দেখতে পারবেন। যিনি কিনতে চান তিনি মালিকের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে কেউ ছুঁতে পারবেন না।’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন আবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরতে ঘুরতে পরী পালং খাটের স্টল চোখে পড়ে। তাই ছবি তুলেছি। আমার মেয়ে খাটটি ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিকের লোকজন খাট ছুঁতে নিষেধ করেছেন। বিষয়টি ভালো লাগেনি।’

খাটটির বিশেষত্ব কী এবং দাম কেন কোটি টাকা জানতে চাইলে অন্তর মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরীর ডিজাইনে তৈরি করায় নাম দেওয়া হয়েছে পরী পালং খাট। এটি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় তৈরি। এতে মেশিনের ব্যবহার হয়নি, সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষত্ব হলো এর ডিজাইন কিংবা ক্যাটালগ বিশ্বের কোথাও নেই। সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা থেকে শখের বশে খাটের ডিজাইন করেছেন আমার ভাই। তৈরি করেছেন স্থানীয় কারিগর আবু বক্কর সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি ও তার এক সহকারী মিলে কাজ শুরু করেন। তিন বছর দুই মাসে কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। কারিগরের মজুরিসহ ৪০-৪১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মেলায় স্টল নেওয়াসহ নানা খরচ মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।’

খাটে ১৬টি পরীর নকশা করা হয়েছে জানিয়ে অন্তর মাহমুদ বলেন, ‘খাটের চার কোণে বড় চারটি পরীর হাতে চারটি প্রজাপতি রয়েছে। এর পাশে চারটি চাঁদ ও ছয়টি সূর্যের নকশা আছে। বিভিন্ন অংশে রাজকীয় কারুকাজ রয়েছে। পাটাতনগুলো ভাজ করে তুলে রাখার ব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের সেগুন কাঠের ফাইবার দিয়ে এটি তৈরি। প্রায় ২০০ ঘনফুট কাঠ থেকে ৮৫ ঘনফুট কাঠের ফাইবার বের করে খাটটি তৈরি করা হয়েছে।’

কাঠের বার্নিশসহ আনুষঙ্গিক কাজের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাঠের বার্নিশের কাজ বেশ মুশকিলের। কারণ এটি সম্পূর্ণ হাতে করতে হয়েছে। এ কারণে প্রথমে তিন জন কারিগর কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে আবু বক্কর সিদ্দিক কাজ করতে রাজি হয়েছেন।’

ডিজাইনে নানন্দিক কারুকাজ ও সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে অন্তর মাহমুদ বলেন, ‘এটি সৃজনশীল শিল্পকর্ম। শিল্পকর্মের কোনও মূল্য হয় না। আমরা খাটের দাম এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেছি। মেলায় এখন পর্যন্ত ৫১ লাখ টাকা দাম উঠেছে। মেলার আরও কিছুদিন বাকি আছে। আশা করছি, প্রত্যাশিত দাম পাবো। যিনি এই শিল্পকে মূল্যায়ন করে খাটটি কিনবেন, তাকে একটি ইয়ামাহা এফ জেড এস মোটরসাইকেল ও এক ভরি ওজনের সোনার গয়না উপহার দেওয়া হবে।’

একজন সংসদ সদস্য খাটটি কিনতে চেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের এক সংসদ সদস্য ৮০ লাখ টাকায় খাটটি কিনতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় এক নাগরিককে তিনি খাটটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পী তার কর্মকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এজন্য বিক্রি না করে প্রথমবার বাণিজ্য মেলায় খাটটি তুলেছেন।’

মেলার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেলা জমে উঠেছে। ছুটির দিনে লোকসমাগম বেশি হচ্ছে। আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আগামী কয়েকদিন মেলা আরও জমবে।’

মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বিদেশি ১০ দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন আয়োজকরা। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড় আছে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

নিউজটি শেয়ার করুণ