ডা. শাহনেওয়াজের ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্যপদ ভুয়া

শেয়ার করুণ

ভুয়া লাইফ মেম্বারে ১০ বছর ধরে সভাপতির পদে আসীন ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাবেক সভাপতি ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী।

অবশেষে ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হাসপাতালটির পরিচালনা পর্ষদ। তদন্ত রিপোর্টে ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর লাইফ মেম্বার (জীবন সদস্য) ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় তার লাইফ মেম্বার বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার ৭ মে হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত করা হয়। এছাড়াও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের পূর্বতন কমিটির চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ পদত্যাগ করায় শনিবার নতুন নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও সমিতির সাবেক সভাপতি ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী (বিএমএ নারায়ণগঞ্জ জেলা সাবেক সভাপতি) ২০১০ সাল থেকে সভাপতি পদে আসীন থাকলেও সে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জাল জালিয়াতের মাধ্যমে লাইফ মেম্বার (জীবন সদস্য) হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। সমিতির মূল রেজিস্টারে কোথাও তার নাম ছিলনা।

১৬৩ নং সদস্য মরহুম গোলাম মোস্তফা ভূইয়ার নামটি কেটে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং একটি ভুয়া জীবন সদস্য ফরম মরহুম গোলাম মোস্তফা ভূইয়ার ফরমের বদলে রেখে দেয়া হয়েছিল, যা সম্পূর্ণরুপে জাল ও অসংগতিপূর্ণ। ভূয়া জীবন সদস্য হয়ে তিনি সমিতি পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদেরও সভাপতি হয়েছেন।

এছাড়াও শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগও উঠে। গত বছরের ডিসেম্বরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদ ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক ছিলেন অ্যাডভোকেট শওকত আলী। বাকী সদস্যরা হলেন, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, সাবেক এএসপি আজিজ উল্লাহ, সামছুজ্জামান। তদন্ত কমিটি গত ফেব্রুয়ারীর শেষ দিকে তাদের তদন্ত রিপোর্ট পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারীর কাছে দাখিল করলেও নানা অজুহাতে সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি।

এরই মধ্যে গত ৫ মে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে ৭ মে শনিবার সকালে পরিচালনা পর্ষদের সভা আহবান করা হয়। সভা শেষে নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নু জানান, শনিবার সভায় উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটির সিলগালা করা রিপোর্ট খোলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর লাইফ মেম্বার (জীবন সদস্য) বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

যে কারণে শনিবার সভায় অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানকে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বাকী দুই সদস্য হলেন আব্দুর রহমান লিটন ও অ্যাডভোকেট সাদিয়া আফরোজ মুক্তি। আপিল কমিটির চেয়ারম্যান হলেন নাসির উদ্দিন মন্টু। বাকী দুই সদস্য হলেন বজলুর রহমান ও মিজানুর রহমান। নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৫ জুন। এই তারিখের মধ্যে নতুন নির্বাচন বোর্ড নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।

উল্লেখ্য ডা. শাহনেওয়াজ দীর্ঘদিন যাবত জীবন সদস্য না হয়েও সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করে অনেক সুবিধা ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। স্বজনপ্রীতি, অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ডায়াবেটিক হাসপাতালকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।

ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ডা. শাহনেওয়াজ তার মেয়ের জামাই ডা. মো. তাজুল ইসলাম মুন্নাকে ইতোপূর্বে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেন যা জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তার বড় মেয়ে ডা. শায়লা শারমীনকে ১ দিন শুক্রবার ডিউটি করার শর্তে পে-স্কেলের পূর্ণ সুবিধা প্রদান করেন।

ডা. মো. শাহনেওয়াজ ল্যাব এর বিভিন্ন রি-এজেন্ট, মেডিকেল সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ, ইনসুলিন ইত্যাদি কোন কোটেশন, টেন্ডার ও ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই বায়োট্রেড ও অন্যান্য কোম্পানী হতে পরস্পর যোগসাজসে অধিক মূল্যে ক্রয় করে লাভবান হন যার কোন স্বচ্ছ হিসাব প্রদান করেননি। যে টিউব ও নিডেল ১০-১২ টাকায় পাওয়া যায় তিনি বায়োট্রেড হতে ২০ টাকায় ক্রয় করে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা কমিশন নিয়েছিলেন।

বিনা কোটেশনে, বিনা টেন্ডারে ও ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী ব্যক্তিগত ভাবে ফিজিওথেরাপী বিভাগের যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন যার কোন স্বচ্ছ হিসাব প্রদান করেন নাই। কোন টেন্ডার কোটেশন ছাড়াই প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা দিয়ে হাসপাতালের আউটডোরের জন্য শেড নির্মাণ করেন যা ২ বছরের মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় পুণরায় মেরামত করা হয়।

সূত্রঃ নিউজ নারায়ণগঞ্জ

নিউজটি শেয়ার করুণ