ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় এবং দক্ষিন বঙ্গ থকে ঢাকা প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ রাজনৈতিকভাবে সব দলের কাছেই সমান গুরত্বপূর্ণ। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির কাছেও রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক কারনে গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ। যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ সবসময়ই রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামকে টার্গেট করে ঢেলে সাজাতে শুরু করেছে জেলা বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে। কিন্তু বরাবরের মত এবারও কমিটি বাণিজ্য, তৃনমুল পর্যায়ের কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছে দলটির পদবঞ্চিতরা। তাদের দাবী মুলত গুটি কয়েক শিল্পপতির নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে জেলা বিএনপির রাজনীতি। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা কর্মীদের উপেক্ষা করে নিজেদের অনুগত, অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়েই কমিটি করিয়ে আনছে কেন্দ্র থেকে।

গত বছর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর নানা নাটকীয়তা চলে থানা কমিটি নিয়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে আহবায়ক তৈমুর আলম খন্দকার ও মামুন মাহমুদের মধ্যকার দুরত্বের কথা।সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈমুর আলম বহিস্কৃত হলে এক রাতের মধ্যেই ৫ থানা এবং ৫ পৌরসভার কমিটি অনুমোদন দেয় মামুন মাহমুদ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে কমিটি নিয়ে বাণিজ্যের কথা।
নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে ফতুল্লায় শাহ আলম, আড়াইহাজারের নজরুল ইসলাম আজাদ এবং রূপগঞ্জের দিপু ভূইয়ার প্রেসক্রিপশনেই দেয়া হয়েছে কমিটি। যেখানে বাদ দেয়া হয়েছে ত্যাগী ও পপরীক্ষিত নেতাদের। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী লোকদের ঠাই হয়েছে কমিটিগুলোতে। ফতুল্লার বিশিষ্ট শিল্পপতি শাহ আলম বিএনপির রাজনীতিতে খাতা কলমে না থাকলেও তার নির্দেশমতই কমিটি হয়েছে বলে দাবি পদবঞ্চিতদের। এ নিয়ে ফতুল্লা বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলনও করেন জেলা প্রেসক্লাবে।
যুবদলের মহানগর কমিটির পরও জল কম ঘোলা হয়নি। কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি অভিযোগ এনে পদবঞ্চিতদের শোডাউন করতে দেখা গেছে। পদবঞ্চিতদের ধাওয়ায় পালিয়ে যেতেও দেখা গেছে নবগঠিত কমিটির নেতাদের।

সবশেষ জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষনার পর আবার আলোচনায় বিএনপি। জেলা যুবদলের নতুন কমিটিতে আহবায়ক করা হয়েছে গোলাম ফারুক খোকনকে। যার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ নেতাকর্মীদের। সাবের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন নিষ্ক্রিয় থাকলেও কমিটি গঠনের ঠিক আগ মুহুর্তে সক্রিয় হন এই ব্যবসায়ী নেতা। এছাড়াও রূপগঞ্জের মোস্তাফিজুর রহমান দিপুর খুব ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত তিনি। অপরদিকে
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধেও রয়েছে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ।
দীর্ঘদিন জেলা সভাপতির দায়িত্বে থাকলেও জেলার সকল কমিটি গঠন করতে পারেননি তিনি। যে সব কমিটি গঠন করেছে সে সকল কমিটি নিয়েও ছিল বাণিজ্যের অভিযোগ। ফতুল্লা, রূপগঞ্জে রনির বিরুদ্ধে কমিটি বানিজ্যের অভিযোগ এনে একাধিকবার ঝাড়ু মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
আন্দোলন সংগ্রামে জেলায় কোন কার্যত ভূমিকাতেই ছিল না ছাত্রদল। ঢাকা আর কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আসতে নয়াপল্টনেই বেশী সময় দেখা গেছে রনিকে। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ শাহ আলমের অনুসারী রনি নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলকে নিজ স্বার্থে কেন্দ্রীয় প্রোগ্রামে নিয়ে নিজের পদটাই হাসিল করেছেন। কার্যত মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে গেছেন নারায়নগঞ্জে ছাত্রদলের রাজনীতির।
তৃনমুলের অভিযোগ আগামীতে জেলা বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠনগুলোতে যদি ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন না করা হয় তবে নারায়ণগঞ্জে কোন আন্দোলনই হবে না। শাহ আলম, দিপু চৌধুরী কিংবা নজরুল ইসলাম আজাদ বলয় থেকে বেরিয়ে না আসলে বিএনপির আন্দোলন একই বৃত্তে ঘুরপাক খাবে। তাদের দাবি টাকা দিয়ে কমিটি দেয়া যায় আন্দোলন করানো যায় না।
