গত বছরের আগস্টের শেষদিকে গীতিকবি মহসীন মেহেদীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। দুজনের সংসারজীবনের বয়স মাত্র ৭ মাস। তবে এ অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিকূলতা আর বাস্তবতার কষাঘাতে হাঁপিয়ে উঠেছেন ন্যান্সি। সেজন্যই নিজের বর্তমান সংসার নিয়ে তার বক্তব্য, “বিয়েটা না করলে প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম”।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে বিবাহিত জীবন, সংসার, সন্তান ও যাবতীয় বিষয়ে নিয়ে ফিরিস্তির ডালি খুলে বসেন। সেখানে উঠে এসেছে কেবলই দীর্ঘশ্বাস ও আক্ষেপ।

প্রথমেই সন্তানদের বিষয়ে আফসোস করে ন্যান্সি বলেন, “মেহেদীর দুই সন্তান তাদের মায়ের বর্তমান স্বামী অর্থাৎ সৎবাবাকে ঠিকই বহু আগেই হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সৎ মা হিসেবে আমাকে সহ্যই করতে পারে না। অন্যদিকে, আমার ছোট মেয়ে নায়লা মেহেদীকে কোনোভাবেই সম্পর্ক অনুযায়ী সৎ বাবার আসনটুকু দিতে নারাজ। কিন্তু স্বচ্ছন্দে তার বাবার জন্য পাত্রী দেখছে এবং তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথাও বলছে।”
তবে নিজের প্রথম সন্তান রোদেলাকে নিয়ে তার অভিজ্ঞতা পুরো বিপরীত। তিনি বলেন, “ ব্যতিক্রম শুধু আমার বড় মেয়ে রোদেলা। দিনশেষে সে সবাই যার যার মতো করে সুখে আছে এটাই দেখতে চায়। এ কারণে বেচারিকে সোশাল মিডিয়ায় যথেষ্ট নোংরা মন্তব্যেরও মুখোমুখি হতে হয়। আমার রোদেলা! সন্তানের চাইতেও বেশি যে আমার জীবনে মায়ের রূপে এসেছে! আজ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে রোদেলাই আছে এবং থাকবে জানি। ”
প্রসঙ্গত, বিয়ের আগে ন্যানসির দুবার ও মেহেদীর একবার বিবাহবিচ্ছেদ রয়েছে। দুজনের আগের সংসারে রয়েছে চার সন্তান।
মেহেদী-ন্যানসির সাত মাসের সংসার আলো করে আসছে নতুন অতিথি। তবে নতুন অতিথির আগমন নিয়ে আনন্দের জায়গায় দুশ্চিন্তাই বাসা বেঁধেছে ন্যানসির মনে। এ গায়িকা বলেন, “নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে অর্থ বা সম্পদ বণ্টনে কে কী পাবে আর কী হারাবে সেসব নিয়ে রয়েছে চুলচেরা হিসাব! আমি নিজেও যেন ভাবতে বসলাম, আচমকাই গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। মনে হলো স্বস্তি খুঁজতে গিয়ে অশান্তিকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলাম। বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমার আর মেহেদীর সংসার জীবনের বয়স সাত মাস। এদিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাদের দুজনের জন্যই নতুন করে অল্প দিনের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জীবনসঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্তটুকু নেওয়া কঠিন ছিল। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়া যেন আনন্দের চাইতেও দ্বিগুণ ভীতি। আমার দুই ভাই, ভাবী এবং রোদেলা বাদে দুই পরিবারের কোনো সদস্যদের নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে নেই কোনও উচ্ছ্বাস, উল্টো রয়েছে বিদ্রূপ মেশানো হতাশা।”
৭ মাসের সংসারের নানা জটিলতার বিষয়ে ন্যান্সির ভাষ্য, “আমাদের জীবন চলায় ব্যর্থতার তকমা অনেক জুটেছে। এখন দুজন দুজনের কাছে ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী হওয়ার চাইতেও আস্থার হয়ে ওঠাটাই যেন বড় পরীক্ষা! আর প্রতিদিনকার জীবনযাপন করার প্রক্রিয়া দুজনের এতটাই ভিন্ন যে সেটা রপ্ত করাটাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার! খাওয়া, ঘুমানো, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করার ভঙ্গি, নিত্যদিনের কথা বলা, মত প্রকাশ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, কাছে আসা- এর সবই যেন নতুন করে শেখার বিষয়! মনে হলো অল্প দিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি।”

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “এ সাত মাসের পথচলায় এত বেশি হোঁচট খেয়েছি, সম্পর্কের বিষাক্ত দিক দেখেছি, সন্তানের অবহেলা পেয়েছি, অসম্মানিত হয়েছি, কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে যোগাযোগ হারিয়েছি, সৎ ছেলেমেয়ের কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে বারংবার কটু কথা শুনেছি। শ্বশুরবাড়ির তিরস্কার দেখেছি, নিজের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছি, পিতামাতাহীন নিজেকে অসহায় ভেবেছি, দুমুখো মানুষ দেখেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি, অবাক হয়েছি, ঘেন্না করেছি, তীব্র ভয় পেয়েছি, কেঁদেছি, টালমাটাল হয়েছি, অভিযোগে দিশেহারা হয়েছি, এত বছরের সংসার জীবনের মাঝপথে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করেছি, চিৎকার করেছি, গালি দিয়েছি, সুন্দর চেহারার আড়ালে কদর্য রূপ দেখেছি, শিক্ষিত মানুষের বিকৃত রুচি দেখেছি, আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা দেখেছি, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, অভিমানে বোবা হয়ে গেছি, বিশ্বাস হারিয়েছি, সোশাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছি, সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, নিজের মৃত্যু কামনা করেছি, মানসিক অবসাদে ভুগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। পূর্বে অনেক চড়াই উতরাই পার হলেও এত কিছু একবারে, একসঙ্গে আগে কখনও ঝড়ের গতিতে জীবনে আসেনি। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী!”
এ তো গেল শুধু সংসারের ভেতরের কষ্টের কথা। ন্যান্সি কথা বলেছেন সাইবার বুলিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিকার হওয়া হয়রানি নিয়েও। তিনি বলেন, “সোশাল মিডিয়ায় নিজের স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করলে উপহার হিসেবে একগাদা গালি; আতঙ্ক নিয়ে পোস্ট মুছে দিলে পুনরায় সংসার ভাঙার খেতাব! মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বজোড়া দজ্জাল শ্বশুরবাড়ি নিয়ে বসে আছি, যাদের কাজ হলো আমার খুঁত ধরা।”
তবে শত বেদনা আর সাংসারিক জটিলতার পরেও স্বামীর সঙ্গে জীবনের বাকি পথটুকু চলতে চান ন্যান্সি। এ প্রসঙ্গে এ সঙ্গীতশিল্পী বলেন, “এত কিছুর পরও মেহেদী আর আমি সংসার চালিয়ে যেতে চাই, একসঙ্গে বৈরী পথ চলতে চাই, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে চাই, একে অপরকে জীবনে প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকার মতো ভালোবাসি বলতে চাই, হাতের ওপর হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে চাই, দিন শেষে সাত মাসের চেনা ঘরে ফিরতে চাই, সংসারের পরিচিত গন্ধে শ্বাস নিতে চাই, নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই, রাত জেগে অহেতুক ঝগড়া শেষে জড়াজড়ি করে ঘুমোতে চাই। কী অদ্ভুত আমাদের চাওয়া পাওয়া!”
