‘পমপম’ গ্রুপে সাবেক প্রেমিকাদের ছবি-ভিডিও ফাঁস, গ্রেফতার ৪

শেয়ার করুণ

আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘পমপম’র কাছে সাবেক প্রেমিকাদের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফাঁসকারী চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতাররা হলেন- ফাইজুল মল্লিক (২১), আশরাফুল প্রত্যয় (১৯), সাফিন রহমান (১৮) ও তামিম রহমান (২১)। বুধবার (১৯ জুলাই) ঢাকার সাভার, মিরপুর, উত্তরা এবং কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার কিশোরী-তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও আদায়ের পাশাপাশি অর্থ দাবি করতো। এছাড়া এসব ছবি-ভিডিও বিক্রি করে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর আগে গত ২১ মে গ্রুপের মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডি জানায়, গ্রেফতাররা তাদের সাবেক প্রেমিকাদের হয়রানি করতে আপত্তিকর কন্টেন্ট পমপম গ্রুপের কাছে ভাইরাল করার জন্য দিয়েছিল।

গ্রেফতার তরুণদের অপরাধ সম্পর্কিত চারটি ঘটনা সচেতনতার জন্য উল্লেখ করা হলো:

প্রথম ঘটনা
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কয়েক বছরের পুরনো প্রেম ভেঙে গেলে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে শুরু করে মেয়েটি। যা জেদের জন্ম দেয় সাবেক প্রেমিক সাফিন রহমানের মনে। ফলে প্রতিশোধ নেওয়ার ছক কষতে থাকে সে। বেছে নেয় টেলিগ্রামের ভয়ানক অন্ধকার পথ। মেয়েটির প্রায় দুই শতাধিক একান্ত ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও, যেগুলো প্রেমপর্বে নানা কৌশলে সে নিয়েছিল, সেগুলো তুলে দেয় টেলিগ্রাম গ্রুপ পমপমের হাতে। এরপর মেয়েটির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ছবিসহ তার নাম-পরিচয় টেলিগ্রামে ভাইরাল করে দেয় চক্রটি। মেগা ফাইলের মাধ্যমে বিক্রি করতে থাকে মেয়েটির কন্টেন্ট। চেনা-অচেনা মানুষের চাপে, কটু কথায় বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিল ভুক্তভোগী।

দ্বিতীয় ঘটনা
একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। প্রেমের ফাঁদে ফেলে যাকে মিরপুরের এক রেস্তোরাঁয় নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে কুমিল্লার তামিম রহমান নামের এক যুবক। সেসব মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে রাখে মোবাইল ফোনে। এরপর শুরু হয় প্রতারণা। টাকা এবং একান্ত ছবি দিতে দিতে ক্লান্ত মেয়েটি অবশেষে আত্মহননের পথে হাঁটে। তবে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। কারণ, ওইসব ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেয় নেশাগ্রস্ত তামিম।

তৃতীয় ঘটনা
তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। অনলাইনে পরিচয় হয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল প্রত্যয়ের সঙ্গে। কিন্তু মেয়েটি টের পায়নি যে প্রত্যয় একজন দুর্ধর্ষ হ্যাকার। মেয়েটির সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে বিনিময় হওয়া অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও কৌশলে হাতিয়ে নেয় আশরাফুল। এরপর সেগুলো ছড়িয়ে দেয় পমপম গ্রুপে। অনলাইনে ভাইরাল করে দিয়ে মেয়েটিকেই আবার সাহায্যের হাত বাড়ায় সে। বিপদ থেকে উদ্ধার করবে বলে কৌশলে সখ্যতা গড়ে তোলে। মেয়েটি যতক্ষণে টের পায়, বড্ড বেশি দেরি হয়ে গেছে। একদিকে টাকার চাপ, অন্যদিকে মানসিক অত্যাচার, প্রতিটি রাত তার কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়। মেয়েটির বাবা একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেও সবার অগোচরে প্রিয় সন্তানের জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা তিনি টেরই পাননি।

চতুর্থ ঘটনা
ফাইজুল মল্লিক। বাবা সৌদি প্রবাসী। হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা। ফাইজুল ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে, প্রেমের দিনগুলোতে সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে নিজের একান্ত মুহূর্তের ধারণ করা ভিডিও সাবেক প্রেমিকার অন্য বন্ধুর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পমপম গ্রুপকে অনুরোধ করে কন্টেন্টটি ভাইরাল করতে। এরপর বেশকিছু ফেসবুক আইডি খুলে সেগুলো দিয়ে ভুক্তভোগী ছেলে ও মেয়েটিকে হয়রানি করতে থাকে।

সিআইডি কর্মকর্তা আজাদ রহমান জানান, প্রতিটি ঘটনাতেই লক্ষ্য করা যায়, খুব অল্প বয়সে অনলাইনের অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়েছে অভিযুক্ত তরুণরা। বাবা-মায়ের উদাসীনতা এবং অতিরিক্ত আদর-ভালোবাসাকে পুঁজি করে খেলা বা পড়াশোনার খরচের কথা বলে বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে তারা পা বাড়াচ্ছে বিপথে।

ভুক্তভোগী মেয়েরা তাদের একান্ত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও আদান-প্রদান করে যেমন ভুল করেছে, সেগুলো পমপম গ্রুপে ভাইরাল করে তারচেয়েও ভয়ানক অপরাধ করেছে অভিযুক্ত তরুণরা। প্রতিটি ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কান্না ও অসহায়ত্বই যেন আসামিদের আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করেছে।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে পৃথক আইনেও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

গত ২১ মে পমপম গ্রুপের মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে কিশোরী-তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও আদায়ের পাশাপাশি অর্থ দাবি করে আসছিল। এমনকি এসব ছবি-ভিডিও বিক্রি করে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুণ