নিতাইগঞ্জের ডালপট্রির জোড়া খুনের সেই ঘাতকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা আজ

শেয়ার করুণ

সময়ের নারায়ণগঞ্জ: নিতাইগঞ্জের ডাইলপট্টির মা মেয়ে ডাবল মার্ডারের মূল আসামী আল জুবায়ের সপ্নীল (২৬) এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে আজ। সিভিলসার্জন অফিসে ৩ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টীম
সপ্লীলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন।

ভিক্টোরিয়া মেডিক্যাল মেডিক্যাল টীমেরপ্রধান হলেন সিভিল ডা. মো.সার্জন মুশিউররহমান।বাকি ২ জন মেডিক্যাল অফিসার মেডিক্যাল সিভিল অফিসের।একজন অফিসার সার্জন

বোর্ডের ফলাফলের দিকে চেয়ে আছে কোর্ট। খুনের ঘটনার একবছর পর আসামী পক্ষ সপ্নীলকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণের চেষ্টা করছে। একজন নৃশংস খুনিকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করায় মামলার চার্জ গঠন হয়নি। আসামী পক্ষের আইনজীবী আল জুবায়ের স্বপ্নীলকে মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) দাবি করেছেন।

দাবির সাথে আদালতে রূপগঞ্জের একজন মানসিক চিকিৎসকের সাটিফিকেট দাখিল করা হয়। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মা
মেয়ের খুনি আল জুবায়ের স্বপ্নীল এর এলাকা পাইকপাড়ার লোকজন।

পাইকপাড়া ও ডাইলপট্টির লোকজন বলছেন, জুবায়ের কোনভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলনা কোনদিন। এখনো নয়। সে প্রেম করতে গিয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে গিয়েছে। এখন ঘটনার একবছর পর তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এমন অপ্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গের অবতারনা। কারণ মানসিক ভারসাম্যহীন যতবার উচ্চারিত হবে ততবারই স্বপ্নীলের প্রতি সকলের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হবে।

বাংলা সিনেমার কাহিনী টেনে আনার চেষ্টা আর কি ! ওদের পরিবারটাই ধূরন্ধর পরিবার। দেখেন কিভাবে ঘটনা ভিন্নদিকে মোড় দিতে চেষ্টা করছে। এটা জুবায়েদের পরিবারের সুক্ষ্ম বুদ্ধির আল জুবায়ের সপ্নীল। ২৬ বছরের তরতাজা যুবক। টগবগে এই তরুণ প্রেমঘটিত ঘটনায় দু’জন নারীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। দুজন নারীকেই জুবায়ের ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। তখন হাতে গ্লাভস পরা ছিল। সেই হাতে ছিল রক্তমাখা কেউ তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেনি। মামলা চলার এক বছরের মাথায় মা মেয়ের খুনি এই যুবককে আকস্মিকভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন দাবী করা হয়।


জানা গেছে, ২০২২ সালের ১ মার্চ বিকেলে শহরের পাইকারী ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় স্বপন দাসের মালিকানাধীন মাতৃসদন নামে একটি ৬ তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটবাসায় মা ও অন্ত:স্বত্বা মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় রক্তমাখা ধারালো ছুরিসহ
হাতে গ্ল্যাভস পরিহিত ঘাতক আল জুবায়েরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘাতক আল জুবায়ের স্পীল শহরের পাইকপাড়া এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের ছেলে।
তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেছেন, ‘জুবায়েরকে আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে স্বীকার করেছে তাঁর নিজের চলার জন্য টাকার দরকার। এ কারণে বড় বাড়িটি তিনি টার্গেট করেন। ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটের কেউ দরজা খোলেননি। তখন পাশের রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে কলিং বেল চাপেন
তিনি।

ওই ফ্ল্যাটের দরজা খুললে ভেতরে ঢুকে রুমা চক্রবর্তীর গলা চেপে ধরে জুবায়ের। এ সময় রুমার গলার মালা তিনি ছিনিয়ে নেন। এরপর ছুরি মেরে রুমাকে হত্যা করেন। রুমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাঁকেও ছুরি মেরে হত্যা করেন।
এদিকে, চলতি বছরের (২০২৩ সাল) শুরুর দিকে আলোচিত সেই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায়
আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) এএইচএম কামরুজ্জামান ফারুক। অভিযোগপত্রে একমাত্র আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছেন ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতারকৃত আল জুবায়েদ স্বপ্নীলকে।


অভিযোগপত্রে সাক্ষী দেখানো হয়েছে ৩০ জনকে। ইতিমধ্যে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি চীফ জুডিসিয়াল আদালত থেকে জেলা ও দায়রা আদালতে বদলি করা
হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দত্ত বাপ্পী বলেন, ১৬ এপ্রিল চার্জ গঠনের নির্ধারিত তারিখ হলেও আসামীপক্ষের আইনজীবী আসামী আল জুবায়ের স্বপ্নীলকে মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) দাবি করে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন।

ওই মেডিকেল সার্টিফিকেটটি রূপগঞ্জের একজন চিকিৎসকের। আমরা এ বিষয়ে আদালতকে বলেছি নারায়ণগঞ্জ শহর ও রাজধানী ঢাকায় এত চিকিৎসক থাকতেও কেন রূপগঞ্জের একজন চিকিৎসকের সার্টিফিকেট দাখিল করা হলো।

এ বিষয়টি রহস্যজনক। আদালত আসামী আল জুবায়ের স্বপ্নীলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

আসামীপক্ষ জামিন আবেদন করেছিল আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে
প্রেরণের নির্দেশ দেন।

সে মোতাবেক আজ ২১ মে সপ্নীলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বসছে মেডিক্যাল বোর্ড।

নিউজটি শেয়ার করুণ