নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জের ডালপট্রিতে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রামপ্রসাদ বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আটক আল জুবায়ের স্বপ্নীল (২৬)কে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
পরে পুলিশ ওই মামলায় জোবায়েরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠায়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মোহসীনের আদালতে শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে শহরের নিতাইগঞ্জে ডালপট্টি এলাকায় স্বপন দাসের মালিকানাধীন ‘মাতৃভবন’ নামের ৬তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে মা ও তার অন্ত:সত্ত্বা মেয়েকে ধারালো ছোরা দিয়ে হত্যা করে জুবায়ের।

নিহতরা হলেন-রুমা চক্রবর্তী (৪৬) ও তার মেয়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী (২২)। দুইজনের মধ্যে একজনের মরদেহ মেঝেতে ও অপরজনের মরদেহ অর্ধেক খাটের উপর এবং পুরো ফ্লোরে রক্ত। পরে রক্তমাখা ছুরিসহ জুবায়েরকে এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক জুবায়ের কেন এবং কীভাবে মা ও মেয়েকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে তার বর্ণনা দিয়েছে। জুবায়েরের দেয়া তথ্যমতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, টাকা ও সোনাদানা লুট করতে মা ও তার অন্তসত্ত্বা মেয়েকে হত্যা করেছে গ্রেপ্তারকৃত জোবায়ের।
তার নিজের চলার জন্য টাকার দরকার। এ কারণে নিতাইগঞ্জের সবচেয়ে বড় বাড়িটি সে টার্গেট করে। পরে জুবায়ের ওই বাড়ির ৬তলায় রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে কলিংবেল চাপে। এ সময় ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রুমা চক্রবর্তী দরজা খুললে ভেতরে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে গলা চেপে ধরেন জোবায়ের। এরপর রুমার গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর ছুরি মেরে রুমাকে হত্যা করে।
একপর্যায়ে রুমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাকেও ছুরি মেরে হত্যা করে জুবায়ের। এ সময় পাশের রুমে অবস্থানরত রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ছেলের বউ শীলাকে কোপাতে গেলে তিনি ঘাতক জুবায়েরকে ধাক্কা দেন।
এতে জুবায়ের ঘরের মেঝেতে থাকা রক্তে পা পিছলে পড়ে যায়। তখন শীলা দৌড়ে বঁটি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। জুবায়েরও নিচে নেমে আসে।
শীলার হাতে বঁটি ও নিচে অনেক লোক দেখে জুবায়ের আবার ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ তাকে রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করে। এ সময় জুবায়েরের ব্যাগ থেকে দুটি সোনার চেইন ও কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে। জুবায়ের শহরের পাইকপাড়াপুল এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।
আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তার ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেনি। এক দেড় মাস ধরে তার ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল।
সূত্রঃ মানবজমিন
