১৯৯৭ সালে একদিনের ও ২০০০ সালে টেস্ট আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আন্তর্জাতিক পথ চলার সূচনা হয়। ১৯৯৯ সালে নিজেদের প্রথম এক দিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রন করা,পাকিস্তানের মত পরাশক্তি ও স্কটল্যান্ড-কে পরাজিত করে নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার সোপান তৈরি করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।দলটি ২০০০ সালে ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলতে নামে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
সেই থেকে বর্তমান নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের এক পরাশক্তির নাম “বাংলাদেশ”। জাতীয় ক্রিকেটের সেই সূচনালগ্ন থেকেই নারায়ণগঞ্জ-এর নাম জাতীয় দলের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-এর সেরা পাঁচ ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এই উত্থান-পতনের সঙ্গী হয়েছেন। প্রথমেই যার নাম আমাদের মনে পরে তিনি হলেন,
১) মোহাম্মদ শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎঃ তিনি ১৯৭৬ সালের ১জুন নারায়ণগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের হিসেব-নিকেশ করে চমৎকার গল্প পড়া যায়। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী টেস্ট দলের ওপেনার হিসেবে দলের সাথে ছিলেন।
ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টেস্ট ক্রিকেটের সুচনায় ওপেনার হিসেবে তিনি ১২ রান সংগ্রহ করেন। ২০০৪ সালে তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। মারকুটে এই ব্যাটসম্যান তাঁর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন ১৯৯৭ সালের ১০ অক্টোবর, কেনিয়ার বিপক্ষে।
১৯৯৯-এর বিশ্বকাপে তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন এবং দলকে জয় উপাহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।শোয়েব আখতার,ওয়াসিম আক্রাম এবং ওয়াকার ইউনুসের মত বাঘা বাঘা বোলারের শর্ট ডেলিভারিতে তিনি কতগুলো সহজাত ও দৃষ্টিনন্দিত ড্রাইভে ৩৯ রান করতে সমর্থ হন। বিদ্যুৎ ,তাঁর ক্যারিয়ারে ৩ টেস্টে ১৯.৮০ গড়ে মোট ৯৯ রান করেন,যেখানে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৮ রান। একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন এবং প্রথম বাংলাদেশী সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জনে ব্যর্থ হন। ক্যারিয়ারে ২০ ম্যাচে ১৯.০৫ গড়ে সর্বমোট ৩৬২ রান সংগ্রহ করেন।
২) কাজী শাহাদাত হোসেন রাজীবঃ সে সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন শাহাদাত হোসেন। জন্ম ১৯৮৬ সালের ৭ আগস্ট,আমাদের প্রিয় নারায়ণগঞ্জ জেলায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালের ২৬ মে ক্রিকেটের স্বর্গ লর্ডসে টেস্ট খেলার মাধ্যমে ক্রিকেট পাড়ায় তাঁর অভিষেক হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ সূচনা হয় ২০০৬ সালের ১৭ই মার্চ,কেনিয়ার বিপক্ষে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ৮ মার্চ টেস্ট ও ২৮ মার্চ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মধ্য দিয়ে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে। ঝোড়ো গতির এই ফাস্ট বোলার ৩৫ টেস্টে ৫১.৯০ গড়ে মোট ৭০ উইকেটের মালিক যেখানে এক ম্যা চে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৪বার। একদিনের আন্তর্জাতিক ৫১ ম্যাচে ৪৫.৫৯ গড়ে শিকার করেন ৪৭টি উইকেট।
৩) মোহাম্মদ শহীদঃ বোলিং অলরাউন্ডার এই ক্রিকেটারের জন্মও আমাদের প্রিয় নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তিনি ১৯৮৮ সালের ১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে এই ক্রিকেটার মাত্র ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ২ম্যাচে ৩০.৮০ গড়ে তিনি ৫ উইকেট শিকার করেন। সম্ভাব্য ক্যারিয়ার থাকলেও নানা অঘটন-ঘটন পটিয়সীতার জেরে তাকে আর ক্রিকেট অঙ্গনে দেখা যায়নি।উল্লেখ্য যে,২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে তার অভিষেক হয় এবং একই দলের বিপক্ষে ২০১৫ সালের ৬ মে, বর্তমান পর্যন্ত তাঁর সর্বশেষ ও ২য় টেস্ট খেলেছেন।
৪) রনি তালুকদারঃমারকুটে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান আমাদেরই ইসদাইর এলাকা,নারায়ণগঞ্জ-এ জন্মগ্রহণ করেন। সময়টা ২৯ মে,১৯৮৯ সাল। রনি কোনো টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললেও ৯টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। ৯ম্যাচে ২২.৭৭ গড়ে তাঁর মোট সংগ্রহ ২০৫রান। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে বেড়ে ওঠা এই ক্রিকেটার। পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় সময়ের গহব্বরে নিজেকে হারিয়েছেন ডানহাতি এই ওপেনার ব্যাটসম্যান। আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার বিচরণ কামনা করছি।
৫) নাজমুল ইসলাম অপুঃ বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাগিন ড্যান্স-এর প্রচলন ঘটানো এই বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরে।সময়কাল ১৯৯১ সালের ২১ মার্চ। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হয়। বিপিএল মাতানো এই স্পিনার জাতীয় দলে সদ্য এসেছেন। উত্থান-পতনের অনেক কিছুই হয়ত বাকি রয়েছে। আমরা তার ক্যারিয়ারের শুভকামনা করছি। সর্বশেষে আমরা আশাবাদী, বিদ্যুৎও শাহাদাত-এর মত মোহাম্মদ শহীদ, রনি ও অপু আবারো জাতীয় ক্রিকেটে বিচরণ করবে এবং নারায়ণগঞ্জ-এর গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখবে।