ঝিমিয়ে ছাত্রলীগ আলোচনায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নিখোঁজ শ্রমিকলীগ

শেয়ার করুণ

সময়ের নারায়ণগঞ্জ: আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনেরসংখ্যা ৮টি। এর মধ্যে তিন নম্বর রয়েছেস্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রথম ছাত্রলীগ ও দ্বিতীয় শ্রমিকলীগ রয়েছে। এই তিনটি সংগঠন এখন নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তিনভাবে ঝিমিয়ে। গত বছর নারায়ণগঞ্জ

সিটি কর্পোরেশন ঘিরে এই তিনটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। এর পর থেকে নতুন কমিটির প্রত্যাশায় এখনো অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক নেতারা।
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একদিন পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর
শ্রমিক লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। গত বছর ১৭ জানুয়ারী জাতীয়
শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু স্বাক্ষরে কমিটি বাতিল
করা হয়। ওই চিঠিতে মূল দলের নির্দেশক্রমে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় শ্রমিকলীগ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হলো।

এর আগে গত বছর ৯ জানুয়ারি মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে
দেওয়া হয়। চিঠিতে কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর
নাসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন (১৬ জানুয়ারি) বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়
স্বেচ্ছাসেবক লীগ জেলা এবং মহানগর কমিটিসহ সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি।
এর একদিন পর আজ বিলুপ্ত করা হলো মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি। এ
নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩টি ইউনিটের ৪টি কমিটি বিলুপ্ত অন্যদিকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটির
সহ প্রমুখ সভাপতি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান। এরপর জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু নাম ভেঙ্গে তৎপরতা চালিয়ে
হদিস পড়েছে আহবায়ক কমিটির একাংশ নেতারা।

২০২২ সালের জানুয়ারীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামীলীগের
প্রার্থী পক্ষে মাঠে না থাকার অভিযোগ উঠে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয়
নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করায় গত বছর ৮ জানুয়ারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের
তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক
ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দুর
নেতৃত্বে থাকা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

উক্ত বার্তায়কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা উল্লেখ করা হয়। বিলুপ্ত হওয়া সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে নাসিক
নির্বাচনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী পক্ষে মত বিনিময় করছিলেন নেতারা।

এরপর নির্বাচনে আংশিক সময় তাদের প্রচারণা দেখা গেলেও প্রার্থীর কোন
সুবিধা হয়নি বলে তৎকালীণ আলোচনা উঠে আসে। এতে প্রভাবশালী নেতার
ইশারায় জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে একাধিক কর্মসূচী করা
হলেও কেন্দ্রীয় নতুন নেতৃত্বে কাছে যেন চোখে না পড়া মত।

অন্যদিকে মহানগর ছাত্রলীগ বিলুপ্ত হওয়া ১ বছর পর চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নবাগত সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান মহানগর শাখার সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশেষ কর্মী সভা আয়োজন করেন। ওই কর্মী সভা মহানগর ছাত্রলীগের ব্যানারে হলেও আওয়ামীলীগের প্রত্যেকটি সহযোগি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ কর্মী সভা তিন মাস হলেও এখনো মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে কোন লক্ষ্য দেখা
যাচ্ছে না। ফলে প্রত্যাশি নেতা-কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। অপরদিকে বিলুপ্ত
নেতারা আবারো পদ পাবার জন্য দৌড়ঝাপের কারণে নতুনরা চুপসে বসে
আছে। এদিকে মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত হওয়া পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা
ছাত্রলীগের নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। যাদের ছাড়াই আড়াইহাজার থানা
সম্মেলন সহ অন্যান্য শাখা কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও
সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি বহাল থাকলেও
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে সহসভাপতি
তপু চন্দ্র ঘোষ বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা
(ডিবি) পুলিশের পরিচয় দিয়ে এক সৌদি আরব প্রবাসীর ১৭ লাখ টাকা লুটের
গ্রেপ্তার হয়। এর অভিযোগে গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি
তপু চন্দ্র ঘোষকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,

সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্তে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তপু চন্দ্র ঘোষকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা
হলো।’ তপু সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের অর্জুনদি গ্রামের
সাধন চন্দ্র ঘোষের ছেলে।

২০১৯ সালের জুলাইতে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলে ওই কমিটিতে ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পান তপু। পুলিশ জানায়, তপু তার ৩ সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বুঝ গত ৪ এপ্রিল এক সৌদি প্রবাসীর ১৭ লাখ টাকা লুট করেছেন। গ্রেপ্তার হবার পরদিন রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন আসামিরা।

এদিকে ২০২০ সালে অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান শুভ্রদর মাদক সেবনের ছবির পর এবার মহানগর ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মির্জা তোফা আহমেদ ওরফে স্বার্থক আহমেদ তোফার ইয়াবা সেবনরত অবস্থার ছবি প্রকাশিত হয়।
ওই ছবিতে এই ছাত্রলীগ নেতাকে ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় দেখা যায়। জানা যায়, ফতুল্লার চাঁদমারী এলাকার বাসিন্দা মির্জা তোফা আহমেদ ওরফে স্বার্থক আহমেদ তোফা। ২০১৪ সালে সরকারি তোলারাম
কলেজে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। বর্তমানে তোলারাম
কলেজের অনার্সে পড়ছে সে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অর্থ সম্পাদকের পদ পায় তোফা। তার বিরুদ্ধে তোলারাম কলেজে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে মারধর, চাষাড়া রেল স্টেশনে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠন পরিচালনা দুর্বলতা কারণে জেলা ছাত্রলীগের
সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে।

সেপ্টেম্বরেই আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর
শাখার সম্মেলন করতে চান কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মধ্যে চলতি বছরের শুরু
থেকে বেশ তোড়জোড় করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ড
ও থানা কমিটির সম্মেলন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী
স্বেচ্ছাসেবকলীগের বন্দর অঞ্চলের ১৯-২৭ ওয়ার্ডের সম্মেলন তারিখ ঘোষনা
করা হয়েছে। ৭ জুলাই ১৯,২০,২১নং ওয়ার্ড, ৮ জুলাই ২২, ২৩, ২৪নং ওয়ার্ড
ও ৯ জুলাই ২৫, ২৬, ২৭নং ওয়ার্ডের সম্মেলন তারিখ ঘোষনা করা হয়েছে। ওই
সম্মেলনগুলো করার জন্য মহানগর প্রত্যাশি নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে সদর থানা ও মহানগরের ১ থেকে ১৮নং ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সেগুলোর কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। বন্দর অঞ্চলের ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলনের আগেই ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা হবে জানিয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা।

এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী
মেজবাউল হোসেন সাচ্চু জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর অর্ন্তভুক্ত
অনেকগুলো থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন করা হয়েছে। আর যেসব ওয়ার্ড কমিটির
সম্মেলন বাকি আছে সেগুলোর সম্মেলন শেষ করে জেলা ও মহানগর কমিটির
সম্মেলন দেয়া হবে। দুইটি কমিটির সম্মেলন একই দিনে একই মঞ্চে বসে করা
হবে। সেখানে অনেক আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদেরকে নারায়ণগঞ্জ জেলা
ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ শক্তিশালী রূপ দেখানো হবে। ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন
পর্যায়ে কাউন্সিল হওয়া কমিটিগুলো শীঘ্রই দেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুণ