চির তরুন শফিক স্যার, আমাদের অহংকার,অনুপ্রেরণা

শেয়ার করুণ

আদর্শ স্কুল,নারায়ণগঞ্জ। সকাল ১১.১০ মিনিট। ক্লাস শুরুর ঘন্টা পড়ে গেছে। আজকে বছরের প্রথম ক্লাস। ১০ম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের বাংলা ক্লাসে আগমন এক শিক্ষকের। পরিপাটি পোশাক মধবয়সী শফিক স্যার আসলেন বাংলা ক্লাস নিতে। বাংলা ক্লাসে স্যারের আগমনের ৫ মিনিট ধরে ছেলেরা আনন্দে চিৎকারে গলা ফাটাচ্ছে।

চিৎকারের শব্দ শুনে অধ্যক্ষ স্যার চলে আসলেন কি অবস্থা বুঝার জন্য। তিনি আসলেন বুঝলেন এবং চলে গেলেন। সবাইকে ঠান্ডা করে অবশেষে পড়া শুরু করলেন শফিক স্যার। তখন স্যার পান খাওয়া শুরু করেছেন। পান চিবুতে চিবুতে সাহিত্য পড়াতে লাগলেন। মুগ্ধ হয়ে স্যারের কথাগুলো অনবরত গিলতে থাকতাম আমরা। স্যারের পান চিবুনি দেখলে মনে হতো আমরাও পান চিবিয়ে চিবিয়ে সাহিত্যের রস আস্বাদন করছি। স্যার বানিজ্য বিভাগের ক্লাস শিক্ষক ছিলেন। কত সময় নিজেদের ক্লাস ফাকি দিয়ে স্যারের ক্লাস করতে গিয়েছি তার হিসেব নেই। আমাদের ক্লাসেও বানিজ্য বিভাগের কত শিক্ষার্থী এসে ক্লাস করতো তারও হিসাব নেই।

ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি নারায়ণগঞ্জ কর্তৃক পরিচালিত স্কুলে নৈতিক শিক্ষা আর ধর্মীয় অনুশাসন পালনে ছিল খুবই কঠোর। স্কুলের এই কঠোর পরিবেশে কিছুটা স্বস্তির মত ছিল শফিক স্যারের ক্লাস। নবম দশম শ্রেনীর ছাত্রদের কাছে ছিল শফিক স্যার এক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার নাম। বড় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপর ছিল স্যারের অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ। একবার কোন একটা বিশেষ কারনে ক্লাসে অনুদান উঠানোর প্রয়োজন পড়ে।

সর্বসাকুল্যে ৫০০/৬০০ টাকার মত অনুদান উঠে। বিষয়টি জানার পর স্যার ক্লাসে এসে সবাইকে আবার বিষয়টি ব্রিফ করেন এবং সেই একই ক্লাস থেকে ৫০০০ টাকার মত অনুদান তোলেন।

আমাদের ছাত্রজীবনে অনেকগুলো আক্ষেপের অন্যতম একটি আক্ষেপ ছিল স্কুলের বনভোজনে শফিক স্যারকে কখনো পাওয়া যেত না। স্কুলের বিশেষ এই দিনটিতে স্যারের এই অনুপস্থিতি বনভোজনের বর্নকে অনেকটাই ফিকে করে দিত।

আমাদের কিশোর জীবনের প্রিয় স্যার আজ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। চির যুবক এই স্যার এখনো সেই আগের মত আমাদের নিয়ে ভাবেন। দেহের বয়স বেড়েছে স্যারের মনের বয়স এখনো আছে আগের মতই। গত রমজানে আমাদের ইফতার মাহফিলে অসুস্থ শরীর নিয়ে আমাদের মাঝে এসেছিলেন শফিক স্যার। স্যারের দরদমাখা সেই কথা শুনে আমরাও খানিক হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই স্কুল জীবনে।

শফিক স্যার আমাদের জীবনে ছিল এক অনুপ্রেরণার নাম। আজও তিনি সমান জনপ্রিয় হয়ে আছেন আদর্শ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের মাঝে। আমরা গর্ব করে বলতেই পারি, আমাদের একজন অভিভাবক শফিক স্যার ছিলেন। স্যার সুস্থ থাকুক আর বিভিন্ন সময় আমাদের মাঝে এসে আমাদেরকে হারিয়ে দিয়ে যাক আমাদের সেই স্কুল জীবনের অজস্র স্মৃতির সাগরে। ভালো থাকবেন প্রিয় শফিক স্যার।

নিউজটি শেয়ার করুণ