আরিফ হোসেন কনক : ‘ওরা আমার বুক খালি করেছে। আমার দুই ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে। মেজ ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। ওরা বংশ নির্বংশ করতে চেয়েছিল। ওদের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক যেন না থাকে, সেটা চেয়েছিল। এখন আমার নাতি-নাতনিদের কী হবে? ওরা কাকে বাবা বলে ডাকবে?’
দুই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের মা জহুরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন। রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর পাঁচপাড়া এলাকায় নিহতের নিজ বাড়িতে তার সঙ্গে কথা হয়।
এর আগে দুপুরে উপজেলার কাঁচপুর পাঁচপাড়া এলাকায় জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত দুই ভাই হলেন ওই এলাকার মৃত সানাউল্লাহ মিয়ার বড় ছেলে আসলাম সানি (৪৮) ও ছোট ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম রনি (৩৫)। এ ঘটনায় মেজ ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০) গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তারা ৩ ভাই ও ৫ বোন।
হামলার ঘটনার পর স্বামী আসলাম সানির রক্তাক্ত ও নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন স্ত্রী সোনিয়া আক্তার। স্বামীর শোকে তিন সন্তানকে নিয়ে পাগল প্রায় সোনিয়া আক্তার।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘ওরা শুধু জায়গা-জমি চায়। জায়গা-জমির জন্য খুন করেছে। আমি বিচার চাই। ওরা প্রায় সময় আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিতো। আমার চাচাতো ভাসুর মোস্তফা ও তার পরিবারের অন্য সবাই মিলে পরিকল্পনা করে হামলা চালিয়ে আমার স্বামী ও দেবরকে খুন করেছে।’
গুরুতর আহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। তিনি হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘বাড়ির সামনে ড্রেনের কাজ চলছে। সেই ড্রেনে পাইপ দিতে চেয়েছিল আমার ভাসুর আসলাম সানি। এ নিয়ে তার চাচাতো ভাই মোস্তফা ও তার পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে মোস্তফার নেতৃত্বে মামুন, মাফিজুল রহমান, মারুফ, চাপাতি, রামদা ও লোহার রড নিয়ে আমার ভাসুরকে (আসলাম) কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। এ কথা শুনে আমার স্বামী ও দেবর সেখানে ছুটে যায়। তাদেরও কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক আমার ভাসুর ও দেবরকে মৃত ঘোষণা করে এবং আমার স্বামীকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে তার অপারেশন শেষ হয়েছে।’
সাদিয়া আরও বলেন, ‘জমি নিয়ে আমার চাচাশ্বশুর ও তার ছেলে মোস্তফাসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পূর্ববিরোধ রয়েছে। ওরা আমার স্বামীসহ তার তিন ভাইকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল। এসব নিয়ে বেশ কয়েকবার আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূলত সেই বিরোধের জের ধরে আজ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড করেছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাদের ওপর হামলা করে আপন চাচাতো ভাই। এই হামলায় আপন দুই ভাই মারা গেছে এবং এক ভাই আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মারা যাওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। অভিযুক্ত আসামিরা পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’